List of Tribes of India in Bengali (ভারতের উপজাতিদের তালিকা)
ভারতের উপজাতি সংস্কৃতির পরিচিতি
ভারত বরাবরই তার বহুজাতিক এবং বহুভাষিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। এই বৈচিত্র্যের একটি বড় অংশ হলো দেশজ উপজাতি সম্প্রদায়। ‘উপজাতি’ বলতে এমন একটি গোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করে, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও জীবনধারা নিয়ে। ভারতের উপজাতিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পাহাড়, জঙ্গল, উপত্যকা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিজেদের ঐতিহ্য মেনে চলে আসছে। তাদের সংস্কৃতি, উৎসব, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, বাসস্থান সব কিছুতেই রয়েছে এক নিজস্বতা।
ভারত সরকারের হিসেবে, বর্তমানে দেশজ উপজাতি (Scheduled Tribes) সম্প্রদায়ের সংখ্যা প্রায় ৭০০টির মতো। তারা মূলত সংবিধানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী স্বীকৃত একটি বিশেষ শ্রেণি। 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় 8.6 শতাংশ উপজাতি।
তাদের মধ্যে রয়েছে গোঁড়া জীবনধারার জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করা উপজাতিরাও। প্রতিটি উপজাতির রয়েছে এক স্বতন্ত্র ইতিহাস ও ঐতিহ্য। অনেক উপজাতি গোষ্ঠী হাজার হাজার বছর ধরে নির্দিষ্ট অঞ্চলে বাস করে আসছে এবং তাদের নিজস্ব রীতিনীতি, সামাজিক বন্ধন ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলেছে।

Tribes of India- ভারতের জনজাতি History, Culture and Current Situation
উপজাতির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য (List of Tribes of India)
উপজাতি’ শব্দটি সাধারণত এমন জনগোষ্ঠীকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যারা সমাজের মূলধারার বাইরে থেকে থাকে এবং যারা আলাদা ভাষা, ধর্ম, সামাজিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক সংগঠন অনুসরণ করে। ভারতীয় সংবিধানে যদিও “উপজাতি” শব্দের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, তবে প্রশাসনিকভাবে ‘Scheduled Tribes’ বা ‘তফসিলভুক্ত উপজাতি’ হিসেবে পরিচিত।
উপজাতিদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হলো:
- ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা: তারা সাধারণত দূর্গম অঞ্চলে থাকে—পাহাড়, জঙ্গল, দ্বীপ বা সীমান্তবর্তী এলাকা।
- স্বাধীন ও স্বকীয় সংস্কৃতি: তাদের নিজস্ব উৎসব, লোকসংগীত, নৃত্য এবং ধর্মীয় আচার রয়েছে।
- সামাজিক গঠন: উপজাতিদের মধ্যে সাধারণত পিতৃতান্ত্রিক পরিবার দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে মাতৃতান্ত্রিক কাঠামোও বিদ্যমান।
- আর্থিক নির্ভরতা প্রাকৃতিক সম্পদের উপর: চাষাবাদ, বনজ দ্রব্য সংগ্রহ, শিকার, মৎস্য শিকার ইত্যাদির মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে ভারত সরকার বিভিন্ন সম্প্রদায়কে উপজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং তাদের উন্নয়নের জন্য সংবিধানিক সুযোগ-সুবিধা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রদান করছে।
ভারতের উপজাতিদের ইতিহাস ও উৎপত্তি (List of Tribes of India)
ভারতের উপজাতিদের উৎপত্তির ইতিহাস বহু প্রাচীন এবং বৈচিত্র্যময়। বেশিরভাগ গবেষক মনে করেন, উপজাতিরা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম বাসিন্দা। আর্যদের আগমনের বহু পূর্বেই তারা এখানে বসবাস করতেন। অনেক anthropologist মনে করেন, ভারতের বেশিরভাগ উপজাতি গোষ্ঠী প্রোটো-অস্ট্রেলয়েড, দ্রাবিড়, মঙ্গোলীয়, নীগ্রিটো বা ককেশিয়ান বংশোদ্ভূত।
উপজাতিদের ইতিহাস শুধু সাংস্কৃতিক নয়, রাজনৈতিক দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ শাসনের সময় উপজাতিদেরকে “backward” এবং “savage” বলে চিহ্নিত করে আলাদা প্রশাসনিক এলাকায় রাখা হতো। তবে ব্রিটিশরা অনেক সময় তাদের জীবনধারায় হস্তক্ষেপ করেনি, বরং “Excluded” বা “Partially Excluded Areas” হিসেবে ঘোষণা করেছিল, যা পরবর্তীতে ভারতের সংবিধানে পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
স্বাধীনতার পর ভারত সরকার তাদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে—যেমন সংরক্ষিত আসন, শিক্ষার সুযোগ, অর্থনৈতিক সহায়তা, স্বশাসিত অঞ্চল ইত্যাদি। কিন্তু আজও অনেক উপজাতি গোষ্ঠী অবহেলিত এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
What is Bacteria? ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য, ব্যাকটেরিয়াকে উদ্ভিদ বলা হয় কেন?
ভারতে উপজাতি সম্প্রদায়ের শ্রেণিবিন্যাস (sub-caste community classification in india)
ভারতের উপজাতিদের একটি নির্দিষ্ট ছাঁচে ফেলা কঠিন, কারণ তাদের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য অত্যন্ত বেশি। তবে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাদেরকে বোঝা সহজ হয়।
নির্দিষ্ট অঞ্চলের উপজাতি শ্রেণিবিভাগ (List of Tribes of India)
ভারতের উপজাতি গোষ্ঠীদের ভৌগোলিক ভিত্তিতে সাধারণত নিচের শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
- উত্তর ভারতীয় উপজাতি: রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ইত্যাদি।
- পূর্ব ভারতীয় উপজাতি: ওড়িশা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ।
- মধ্য ভারতীয় উপজাতি: মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড।
- দক্ষিণ ভারতীয় উপজাতি: কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু।
- উত্তর-পূর্ব ভারতের উপজাতি: আসাম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুর ইত্যাদি।
- দ্বীপাঞ্চলীয় উপজাতি: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
General Knowledge Questions With Answers PDF in Bengali-সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর PDF
1. উত্তর ভারতের উল্লেখযোগ্য উপজাতির তালিকা (List of notable tribes of North India)
- ভিল (Bhil): রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী একটি প্রাচীন উপজাতি গোষ্ঠী। এরা ঐতিহ্যগতভাবে শিকার ও কৃষিকাজে নিযুক্ত।
- গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া: যদিও এরা মূলত উত্তর-পূর্বে বাস করে, উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমেও এদের কিছু গোষ্ঠীর অবস্থান রয়েছে।
- গুজ্জর ও বকরওয়াল: জম্মু ও কাশ্মীরে এই উপজাতি গোষ্ঠী প্রধানত পশুপালন নির্ভর এবং গ্রীষ্মে উঁচু এলাকায় এবং শীতকালে নিচু এলাকায় অভিবাসী জীবন যাপন করে।
জীবনধারা ও সংস্কৃতি:
উত্তর ভারতের উপজাতিরা সাধারণত নিজেদের ভাষা ও আচারকে গুরুত্ব দেয়। গুজ্জররা ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও বাকিরা মূলত হিন্দু অথবা অ্যানিমিজম বিশ্বাসে বিশ্বাসী। তারা হাতে তৈরি গয়না, পশমী পোশাক, গান ও নাচে খুব পারদর্শী।
2. পূর্ব ভারতের উপজাতি গোষ্ঠী (East Indian tribal group)
পূর্ব ভারত, বিশেষত ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহার রাজ্যগুলো, উপজাতি জনগোষ্ঠীতে ভরপুর। এই অঞ্চলের উপজাতিরা মূলত পাহাড়ি ও জঙ্গলে বসবাস করে এবং কৃষিকাজ, বনজ সংগ্রহ ও মৎস্য শিকার তাদের প্রধান পেশা। তাদের জীবনধারা এখনও অনেকাংশে প্রাচীন রীতিনীতিতে গড়ে উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশার উপজাতি (List of Tribes of India)
এই রাজ্যগুলোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপজাতি গোষ্ঠী হলো:
- সাঁওতাল (Santhal): ভারতের অন্যতম বৃহৎ উপজাতি গোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে এদের বৃহৎ জনসংখ্যা রয়েছে। এদের নিজস্ব ভাষা “সাঁওতালি” এবং নিজস্ব লিপি “অলচিকি” রয়েছে। সাঁওতালরা মূলত কৃষিজীবী এবং পুঞ্জি পদ্ধতিতে বাস করে।
- হো (Ho): ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশা সীমান্তে এই জনগোষ্ঠীর বসবাস। এদের ভাষা ‘হো’, যেটি মুন্ডা পরিবারের অন্তর্গত।
- মুন্ডা (Munda): এই উপজাতিরাও ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িশায় ছড়িয়ে রয়েছে। মুন্ডারা স্বাধীনতা আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, বিশেষত বীর বীরসা মুন্ডার নেতৃত্বে।
- খাড়িয়া, ওরাওঁ, কোল, ভুমিজ, লোধা: এরা মূলত বনজ সম্পদ নির্ভর ও কৃষিজীবী গোষ্ঠী।
জীবনযাপন ও সংস্কৃতি:
পূর্ব ভারতের উপজাতিদের উৎসব, গান, নৃত্য এবং সামাজিক আচার-আচরণে প্রকৃতির প্রভাব স্পষ্ট। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে প্রাকৃতিক শক্তি, পূর্বপুরুষপূজা, এবং অ্যানিমিজম বড় ভূমিকা রাখে। অগ্রহায়ণ, সরহুল, বাহা উৎসব এদের অন্যতম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব।
3. উত্তর-পূর্ব ভারতের উপজাতিরা (tribes of north-east india)
উত্তর-পূর্ব ভারতকে ‘উপজাতিদের ভূমি’ বলা হয়। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস, এবং অধিকাংশ জনগণ নিজস্ব ভাষা, জীবনধারা ও প্রথা নিয়ে জীবনযাপন করে থাকে। এখানে আদিবাসীরা সমাজের মূল কাঠামো, এবং তারা সাংবিধানিকভাবে স্বশাসিত অঞ্চলও পেয়েছে।
নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়ের গোষ্ঠী
- নাগাল্যান্ড: এখানে ১৬টিরও বেশি উপজাতি রয়েছে। উল্লেখযোগ্য গোষ্ঠী—আও, অ্যাঙ্গামী, সেমা, কোন্যাক। এদের প্রতিটি উপজাতির রয়েছে নিজস্ব পোশাক, ভাষা ও লোককাহিনি।
- মিজোরাম: মিজো জনগণ এখানে প্রধান। তারা খ্রিস্টধর্ম পালন করে এবং একটি খুবই সংগঠিত সমাজব্যবস্থা রয়েছে।
- মেঘালয়: খাসি, গারো ও জয়ন্তিয়া উপজাতিরা এখানে বাস করে। বিশেষত্ব হলো—এই তিনটি উপজাতি মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অনুসারী।
- মণিপুর: থাডো, টাংখুল, মেইতেই ও অন্যান্য উপজাতির বসবাস রয়েছে। এদের সমাজ ও ধর্মে হিন্দু ও খ্রিস্টান প্রভাব রয়েছে।
উপজীবিকা ও সংস্কৃতি:
এই অঞ্চলের উপজাতিরা ঝুম চাষ, শিকার ও বনজ দ্রব্য সংগ্রহে পারদর্শী। তাদের নৃত্য, উৎসব (যেমন হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল, চান্দল ফেস্টিভ্যাল) বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।
What is Virus? ভাইরাস কী? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য, ভাইরাসের প্রকৃতি, ভাইরাসকে অকোষীয় বলা হয় কেন?
4. মধ্য ভারতের উপজাতিরা (tribes of central india)
মধ্য ভারত, বিশেষত মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ড – উপজাতিদের ঘাঁটি বলা চলে। এখানকার বেশিরভাগ উপজাতি জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল এবং তাদের সমাজব্যবস্থা এখনও অনেকাংশে আত্মনির্ভরশীল।
ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খন্ডের উপজাতি
- গোন্ড (Gond): ভারতের সবচেয়ে বড় উপজাতি গোষ্ঠী। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, ওড়িশায় বিস্তৃত। গোন্ডদের নিজস্ব দেবতা ও রীতিনীতি রয়েছে। তারা গোন্ডি ভাষায় কথা বলে।
- বাইগা (Baiga): এরা ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে বাস করে। কৃষিকাজে বিশেষ দক্ষ এবং ঐতিহ্যবাহী উল্কি আঁকার কৌশল তাদের মাঝে জনপ্রিয়।
- কোল, ভূমিজ, খণ্ড: এদের প্রধান পেশা বনজ পণ্য সংগ্রহ ও মৌলিক কৃষিকাজ।
- উরাাঁও, খারিয়া, মাল পাহাড়িয়া: এই গোষ্ঠীগুলোও অনেকাংশে নির্দিষ্ট অঞ্চল নির্ভর।
সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার:
এই অঞ্চলের উপজাতিরা সাধারণত হিন্দুধর্ম, প্রকৃতিপূজা এবং তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্ম অনুসরণ করে। গোন্ডি ও বাইগা নাচ, গান, উল্কি ও ধর্মীয় অনুশীলন তাদের পরিচয়ের একটি বড় অংশ।
100 Easy General Knowledge Questions and Answers-100 সহজ সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর
5. দক্ষিণ ভারতের উপজাতিরা (South Indian sub-castes)
দক্ষিণ ভারত, যেমন কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক, এখানেও অনেক ছোট ছোট উপজাতি গোষ্ঠী বসবাস করে। এদের বেশিরভাগই পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে এবং কৃষিকাজ ও বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
কেরালা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ
- তোটা, কুরুম্বা, কোট্টা, ইরুলা (তামিলনাড়ু ও কেরালা): এরা পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। মূলত বনজ খাদ্য, শিকার এবং পারম্পরিক ঔষধি গাছপালার চাষে পারদর্শী।
- যানাদি, লম্বাদী, ছেঞ্চু (অন্ধ্রপ্রদেশ): এদের মধ্যে ছেঞ্চুরা মূলত নির্জন জঙ্গলে থাকে এবং বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
- সোলিগা, বেদা, কাডু কুরুবা (কর্ণাটক): এরা পাহাড়ি ও অরণ্যভূমিতে থাকে। সোলিগারা পরিবেশবান্ধব জীবনের জন্য পরিচিত।
ভাষা ও ধর্ম:
এই অঞ্চলের উপজাতিরা স্থানীয় দ্রাবিড়ীয় ভাষায় কথা বলে। ধর্মবিশ্বাসে প্রকৃতিপূজা, হিন্দুধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের প্রভাব দেখা যায়। এদের উৎসব, লোকগান ও হস্তশিল্পে দক্ষিণ ভারতের রঙিন ঐতিহ্যের ছোঁয়া আছে।
Free GED Math Test Practice Questions-GED গণিত পরীক্ষার অনুশীলন প্রশ্ন
6. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উপজাতিরা (Tribes of Andaman and Nicobar Islands)
এই দ্বীপপুঞ্জে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন এবং বিক্ষিপ্ত উপজাতি গোষ্ঠীগুলোর বাস। এরা বহু হাজার বছর ধরে এখানে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছে। আধুনিক সভ্যতা থেকে একেবারে দূরে থাকা এই গোষ্ঠীগুলি আন্তর্জাতিক গবেষণার বিষয়।
গুরুত্বপূর্ণ উপজাতি গোষ্ঠী: (List of Tribes of India)
জারোয়া: আন্দামান দ্বীপের জঙ্গলে বাস করে। বহির্জগত থেকে আলাদা।
সেন্টিনেলিজ: পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী। কোনো বহিরাগত যোগাযোগ নেই, এবং এদের সাথে যোগাযোগ করা আইনত নিষিদ্ধ।
অঙ্গ (Onges), শম্পেন (Nicobar), গ্রেট আন্দামানিজ: এদের জনসংখ্যা খুবই কম। তারা প্রাকৃতিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
সংস্কৃতি ও জীবনধারা:
এই উপজাতিরা এখনও শিকার, খাদ্য সংগ্রহ ও মাছ ধরার মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করে। এরা আধুনিক বস্তুবাদী জীবনের ছোঁয়া থেকে মুক্ত এবং বহিরাগতদের প্রতি অত্যন্ত শঙ্কিত।
ভারতের সবচেয়ে বড় উপজাতি গোষ্ঠী (List of Tribes of India)
ভারতের উপজাতিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী হিসেবে গোন্ড (Gond) সম্প্রদায়কে ধরা হয়। এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা প্রায় 1 কোটি 20 লক্ষেরও বেশি। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার বিস্তীর্ণ এলাকায় গোন্ড জনগোষ্ঠীর বসবাস।
গোন্ড উপজাতির পরিচয়:
- গোন্ডরা অস্ট্রিক ভাষাভাষী হলেও অনেকেই স্থানীয় ভাষা যেমন হিন্দি, মারাঠি, তেলুগু ইত্যাদি ব্যবহার করেন।
- এদের নিজস্ব ভাষা “গোন্ডি” নামে পরিচিত, যার নিজস্ব বর্ণমালা না থাকলেও মুখে মুখে প্রচলিত ভাষা।
- গোন্ডদের সমাজ সাধারণত পিতৃতান্ত্রিক। তারা প্রধানত কৃষিকাজ, পশুপালন, বনজ সম্পদ সংগ্রহ ও হস্তশিল্পে যুক্ত।
- তাদের ধর্মবিশ্বাস মূলত প্রকৃতিপূজাভিত্তিক। এরা “ফেন-গোন্ড” বা “গোন্ড দেবতা”-কে পূজা করে।
সংস্কৃতি ও শিল্পকলায় অবদান:
গোন্ড আর্ট বা “গোন্ড পেইন্টিং” বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলা যেখানে প্রাকৃতিক উপাদান ও দৈনন্দিন জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এই শিল্পশৈলী আধুনিক আর্ট গ্যালারিতেও স্থান পেয়েছে।
RRB NTPC Reasoning Questions and Answers- RRB NTPC রিজনিং প্রশ্নোত্তর
ভারতের উপজাতি সমাজ শুধু জনসংখ্যার একটি অংশ নয়, বরং দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। তাদের অস্তিত্ব প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের অনুপম নিদর্শন। তারা চিরকাল নির্জন পাহাড়, বন ও নদীর পাশে থেকে পরিবেশবান্ধব জীবন যাপন করেছে।
তবে আধুনিকতার ছোঁয়া, নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে উপজাতিরা বর্তমানে নানা সমস্যার মুখোমুখি ভূমি অধিগ্রহণ, পরিবেশের ক্ষয়, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে পিছিয়ে পড়া। তাই প্রয়োজন শুধু উন্নয়ন নয়, তাদের সংস্কৃতির সুরক্ষা, ভাষার রক্ষা ও জীবিকার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা।
যদি ভারতে “সবার জন্য উন্নয়ন” সত্যিকারের বাস্তবায়ন চাই, তাহলে উপজাতিদের উন্নয়নকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের নিজস্বতায় হস্তক্ষেপ না করে, বরং তাদের ঐতিহ্য ও জ্ঞানকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
0 Comments