What are Waves? How many types of waves are there and what are they? তরঙ্গ কাকে বলে তরঙ্গ কত প্রকার ও কি কি?

তরঙ্গ (Wave) : এই ছোট্ট শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় যে জিনিসটি প্রথম আসে, তা হলো নড়াচড়া বা দুলুনি। আমরা সমুদ্রে ঢেউ দেখি, আমরা শব্দ শুনি, আমরা আলো দেখি, এই সবকিছুই কিন্তু তরঙ্গের মাধ্যমেই ঘটে। বিজ্ঞানের ভাষায় তরঙ্গ এমন একটি ঘটনা, যার মাধ্যমে শক্তি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হয়, তবে কোন বস্তুর ভৌত সরণ ছাড়াই।

তরঙ্গ সাধারণত কম্পনের ফলস্বরূপ তৈরি হয় এবং এটি মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে শক্তিকে পরিবহন করে। এই পরিবহনের সময় কোন পদার্থ বা কণার স্থায়ী স্থানচ্যুতি ঘটে না, বরং তারা তাদের স্থানের চারপাশে কেবল দুলতে থাকে।

এই তরঙ্গ হতে পারে জলের তরঙ্গ, শব্দ তরঙ্গ, কিংবা তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ যা আলো বা রেডিও সিগন্যালের মাধ্যম।

What are Waves

What are Waves?

তরঙ্গের প্রধান শ্রেণীবিভাগ দুটি:

  1. যান্ত্রিক তরঙ্গ (Mechanical Waves)
  2. তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic Waves)

এর বাইরে আরো কিছু উপশ্রেণী রয়েছে, যেগুলো আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

Definition of Melting Point and Freezing Point of Substances- পদার্থের গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্কের সংজ্ঞা দাও। কোনো পদার্থের গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক কি এক?

তরঙ্গের সংজ্ঞা (Definition of Wave)

তরঙ্গ হচ্ছে একটি সময়ভিত্তিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শক্তি মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়। বিজ্ঞানভিত্তিক সংজ্ঞা অনুযায়ী:

“তরঙ্গ হল একটি কম্পন যা কোনো মাধ্যমের মাধ্যমে শক্তির স্থানান্তর ঘটায়, যেখানে কণাগুলো কেবল তাদের গড় অবস্থানের চারপাশে ওঠানামা করে, স্থানান্তরিত হয় না।”

উদাহরণ স্বরূপ:

  • জলপৃষ্ঠে একটি পাথর ফেললে আমরা দেখি চারপাশে তরঙ্গ তৈরি হয়। কিন্তু জল কণাগুলো তাদের মূল অবস্থানে থেকেই কেবল দুলে উঠে।
  • একটি স্পিকার বাজলে আশেপাশের বাতাসের অণুগুলো কম্পন করে এবং শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করে।

তরঙ্গ কিভাবে সৃষ্টি হয় (How waves are created)

তরঙ্গ তৈরি হয় তখনই যখন কোন কণা বা বস্তু তার স্থিতিস্থাপক অবস্থান থেকে সরিয়ে পুনরায় তার অবস্থানে ফেরে। এই ওঠানামার ফলে পাশের কণায় কম্পন ছড়িয়ে পড়ে এবং একে একে পুরো মাধ্যম জুড়ে এই কম্পন এগিয়ে চলে, এটিই তরঙ্গের সৃষ্টি।

তরঙ্গের সৃষ্টি ও বিস্তার নির্ভর করে:

  • উৎসের ধরণ (কম্পনের উৎস কী)
  • মাধ্যমের প্রকৃতি (বায়ু, জল, কঠিন বস্তু)
  • শক্তির মাত্রা (তরঙ্গের শক্তি কতটা)
  • কম্পন যত শক্তিশালী হবে, তরঙ্গ তত বেশি গতি ও বিস্তার লাভ করবে।

Classification of Bacteria (ব্যাকটেরিয়া শ্রেণীবিভাগ) Reproduction, Diseases and Benefits

What are Waves?

তরঙ্গের মূল উপাদানসমূহ (Main Components of a Wave)

তরঙ্গকে ভালোভাবে বুঝতে হলে তার গঠন ও বৈশিষ্ট্যগুলো জানা জরুরি। তরঙ্গের চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে।

তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength)

তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলতে বোঝায় দুটি পরপর সমমানের বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব, যেমন দুইটি শীর্ষ বা দুটি খাদ। এটি তরঙ্গের “একটি চক্র” বা এক ইউনিটের দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে।

  • এককে পরিমাপ করা হয়: মিটার (m)
  • প্রতীক: λ (ল্যাম্বডা)
  • তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত বেশি, ততই কম্পাঙ্ক কম হয়।

কম্পাঙ্ক (Frequency)

কম্পাঙ্ক বোঝায় প্রতি সেকেন্ডে কতটি তরঙ্গ উৎপন্ন হচ্ছে। এটি নির্দেশ করে কতবার কণা তার অবস্থান পরিবর্তন করছে।

  • এককে পরিমাপ: হার্টজ (Hz)
  • প্রতীক: f
  • উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গে দ্রুত গতি ও শক্তিশালী শব্দ সৃষ্টি হয়।

বিস্তার (Amplitude)

বিস্তার বোঝায় তরঙ্গের সর্বোচ্চ উচ্চতা, অর্থাৎ কণার স্থিতিস্থাপক অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চূড়ার দূরত্ব।

  • এটি নির্দেশ করে তরঙ্গের শক্তি কতটা।
  • উচ্চ বিস্তার মানেই শক্তিশালী তরঙ্গ।

তরঙ্গের গতি (Wave Speed)

তরঙ্গের গতি নির্ভর করে এর কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর। সূত্র:

  • V = f × λ
  • (V = গতি, f = কম্পাঙ্ক, λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য)

বিভিন্ন মাধ্যম ও তরঙ্গের ধরন অনুযায়ী গতি পরিবর্তিত হয়। যেমন, শব্দ বাতাসে প্রায় ৩৪৩ m/s গতিতে চলে।

What is Bacteria? ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য, ব্যাকটেরিয়াকে উদ্ভিদ বলা হয় কেন?

What are Waves?

তরঙ্গের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Waves)

তরঙ্গের শ্রেণীবিভাগ করা হয় বিভিন্ন ভিত্তিতে। প্রধানত তিনভাবে তরঙ্গকে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়:

1. যান্ত্রিক তরঙ্গ (Mechanical Waves)

এই তরঙ্গগুলি প্রচারের জন্য একটি মাধ্যমের প্রয়োজন হয়, যেমন বায়ু, জল, বা কঠিন বস্তু।
উদাহরণ: শব্দ তরঙ্গ, জল তরঙ্গ।

2. তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic Waves)

এই তরঙ্গগুলির প্রচারের জন্য কোনো মাধ্যম লাগে না। এগুলো শূন্যের মধ্য দিয়েও চলতে পারে।
উদাহরণ: আলো, রেডিও তরঙ্গ, এক্স-রে।

পদার্থগত ও অ-পদার্থগত তরঙ্গ

  1. পদার্থগত তরঙ্গ: যেগুলো কণার গতির উপর নির্ভরশীল (যেমন ধ্বনি তরঙ্গ)।
  2. অ-পদার্থগত তরঙ্গ: কণার গতি ছাড়াও ছড়াতে পারে, যেমন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ।

What is Photosynthesis? সালোকসংশ্লেষ বলতে কী বোঝ? এর দশাগুলি কী কী? সালোকসংশ্লেষ কী ধরনের বিপাক ক্রিয়া এবং কেন?

যান্ত্রিক তরঙ্গের প্রকারভেদ (Types of Mechanical Waves)

যান্ত্রিক তরঙ্গ প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত:

1. অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ (Longitudinal Waves)

এই তরঙ্গে কণাগুলো কম্পিত হয় তরঙ্গের দিক বরাবর। কণাগুলো একে অপরের দিকে ঘন ও বিরল হয়ে ওঠে।
উদাহরণ: শব্দ তরঙ্গ।

অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য (Properties of longitudinal waves)

অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ (Longitudinal Wave) হল এমন একটি যান্ত্রিক তরঙ্গ, যেখানে মাধ্যমের কণাগুলি তরঙ্গের গতিপথের সমান্তরাল (parallel) দোলন বা কম্পন করে। এই তরঙ্গে সংকোচন (compression) ও প্রসারণ (rarefaction) এর সৃষ্টি হয়।

অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলঃ

  1. কণাগুলির দোলন তরঙ্গের গতির সমান্তরাল: অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গে কণাগুলি তরঙ্গ যত দিকে এগোয়, সেই একই দিকে দুলে বা কম্পিত হয়। উদাহরণ: শব্দ তরঙ্গ বায়ুর মধ্যে এইভাবে চলে।
  2. সংকোচন ও প্রসারণ সৃষ্টি হয়: তরঙ্গ চলাকালীন কণাগুলি কাছাকাছি চলে এলে সংকোচন (compression) এবং দূরে গেলে প্রসারণ (rarefaction) তৈরি হয়।
  3. মাধ্যম প্রয়োজন: অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ গঠনের জন্য একটি পদার্থগত মাধ্যমের প্রয়োজন (যেমন – বায়ু, জল, কঠিন পদার্থ)। এটি শূন্যস্থানে (vacuum) চলতে পারে না।
  4. শক্তি পরিবাহিত হয়, কণা নয়: তরঙ্গ কণাগুলিকে তাদের গড় অবস্থানের চারপাশে দোলাতে থাকে, কিন্তু তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায় না শুধু শক্তি পরিবাহিত হয়।
  5. তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength): অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলতে বোঝায় একটি সংকোচন থেকে পরবর্তী সংকোচন পর্যন্ত দূরত্ব।
  6. বেগ (Speed) মাধ্যমে নির্ভর করে: অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের গতি তার মাধ্যমে নির্ভর করে। সাধারণত কঠিন পদার্থে বেশি বেগে চলে এবং গ্যাসে কম।
  7. তরঙ্গ প্রতিফলন, প্রতিসরণ, হস্তক্ষেপ ইত্যাদি ঘটে: অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গেও প্রতিফলন (reflection), প্রতিসরণ (refraction), বিচলন (diffraction), হস্তক্ষেপ (interference) এবং অনুপ্রবেশ (interference) ঘটে।
  8. উদাহরণসমূহ: শব্দ তরঙ্গ, বায়ু বা জলে চলা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। জলের গভীরে সৃষ্ট তরঙ্গ, গ্যাসে উৎপন্ন স্পন্দন, অল্টারসাউন্ড তরঙ্গ

2. পরিধি তরঙ্গ বা তির্যক তরঙ্গ (Transverse Waves)

এতে কণাগুলি তরঙ্গের দিকের সঙ্গে লম্বভাবে ওঠানামা করে।
উদাহরণ: জল তরঙ্গ, আলো।

তির্যক তরঙ্গ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of transverse waves)

তির্যক তরঙ্গ (Transverse Wave) হল এমন একটি তরঙ্গ, যেখানে মাধ্যমে কণাগুলির দোলন বা কম্পন তরঙ্গের চলার পথে লম্বালম্বি (perpendicular) হয়। এই তরঙ্গে শৃঙ্গ (crest) ও তরঙ্গ-গর্ভ (trough) সৃষ্টি হয়।

তির্যক তরঙ্গের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলঃ

  1. কণার দোলন তরঙ্গের গতিপথের লম্বালম্বি হয়: তির্যক তরঙ্গে মাধ্যমে কণাগুলি তরঙ্গ যেদিকে ছড়ায়, সেই দিকের লম্বালম্বি দিকে দুলে বা কম্পিত হয়। উদাহরণ: দড়ির একদিকে কাঁপালে কণাগুলি উপরে-নিচে দোলে, কিন্তু তরঙ্গ চলে সামনে।
  2. শৃঙ্গ (Crest) ও তরঙ্গ-গর্ভ (Trough) সৃষ্টি হয়, শৃঙ্গ যেখানে কণা সর্বোচ্চ উপরে ওঠে। তরঙ্গ-গর্ভ – যেখানে কণা সর্বনিম্ন নিচে নামে।
  3. তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength): একটি শৃঙ্গ থেকে পরবর্তী শৃঙ্গ পর্যন্ত বা একটি তরঙ্গ-গর্ভ থেকে পরবর্তী তরঙ্গ-গর্ভ পর্যন্ত দূরত্বকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলা হয়।
  4. মাধ্যমের প্রয়োজন (বিশেষ করে কঠিন ও তরল): তির্যক তরঙ্গ সাধারণত কঠিন ও তরল মাধ্যমে সহজে চলতে পারে। গ্যাসে সাধারণত ছড়াতে পারে না (বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া)।
  5. শক্তি পরিবাহিত হয়, কণা নয়: তরঙ্গ মাধ্যমে কণাকে তার গড় অবস্থানের চারপাশে দোলাতে থাকে, কিন্তু কণা স্থানান্তরিত হয় না – শুধু শক্তি পরিবাহিত হয়।
  6. প্রতিফলন, প্রতিসরণ, বিচলন ইত্যাদি ঘটে: তির্যক তরঙ্গেও প্রতিফলন, প্রতিসরণ, হস্তক্ষেপ ও বিচলনের মতো ঘটনা ঘটে।
  7. বেগ মাধ্যমে নির্ভর করে: তির্যক তরঙ্গের গতি তার মাধ্যমে নির্ভর করে। কঠিন পদার্থে এর গতি সাধারণত বেশি হয়।
  8. উদাহরণসমূহ: জলের পৃষ্ঠে তরঙ্গ, দড়িতে সৃষ্ট তরঙ্গ, আলো ও অন্যান্য তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ (তবে এগুলো যান্ত্রিক নয়, তবুও প্রাকৃতিকভাবে তির্যক ধরণের)

3. পৃষ্ঠ তরঙ্গ (Surface Waves)

এগুলি দুইটি মাধ্যমের সংযোগস্থলে সৃষ্টি হয়, যেমন বাতাস ও জলের সংযোগস্থলে।
উদাহরণ: সমুদ্রের ঢেউ।

What is Virus? ভাইরাস কী? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য, ভাইরাসের প্রকৃতি, ভাইরাসকে অকোষীয় বলা হয় কেন?

তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের প্রকারভেদ (Types of Electromagnetic Waves)

তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic Waves) এমন একটি তরঙ্গ যা তড়িৎ এবং চুম্বক ক্ষেত্রের পারস্পরিক দোলনের মাধ্যমে শূন্যস্থানেও (vacuum) ছড়াতে পারে। এই তরঙ্গগুলির বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যা তরঙ্গদৈর্ঘ্য (wavelength)আবৃত্তি (frequency) অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। একত্রে একে Electromagnetic Spectrum বলা হয়।

1. রেডিও তরঙ্গ (Radio Waves)

রেডিও তরঙ্গ কী?

রেডিও তরঙ্গ হল একটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি এবং কম্পাংক সবচেয়ে কম। এই তরঙ্গগুলি 30 হার্‌জ (Hz) থেকে 300 গিগাহার্‌জ (GHz) পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং এটি বাতাস, মহাকাশ বা খালি স্থান দিয়ে চলাচল করতে পারে, কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।

রেডিও তরঙ্গ তৈরি হয় যখন একটি চার্জ কণার কম্পন বা দোলন ঘটে, যেমন একটি অ্যান্টেনা (antenna) থেকে। এই তরঙ্গগুলি আলো বা অন্যান্য তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মতোই আলোকবেগে (প্রায় 3×104 m/s) গমন করে।

রেডিও তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য:

  • তরঙ্গদৈর্ঘ্য: কয়েক মিলিমিটার থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
  • কম্পাংক: অন্যান্য তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের তুলনায় অনেক কম।
  • বেগ: আলোর গতিতে চলে।
  • প্রবেশযোগ্যতা: কঠিন ও অলোহিত বস্তু ভেদ করতে পারে।
  • প্রতিফলন ও বিকল্পন: আয়নোমণ্ডলে প্রতিফলিত হতে পারে, যা দীর্ঘ দূরত্বে সংকেত পাঠাতে সাহায্য করে।

রেডিও তরঙ্গের ব্যবহার:

  • রেডিও সম্প্রচার: এএম (Amplitude Modulation) ও এফএম (Frequency Modulation) রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে গান, খবর বা অন্যান্য অডিও তথ্য সম্প্রচার করা হয়।
  • টেলিভিশন সম্প্রচার: প্রাচীন অ্যানালগ টিভি ও আধুনিক ডিজিটাল টিভি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সংকেত পাঠায়।
  • মোবাইল ফোন ও ওয়্যারলেস যোগাযোগ: মোবাইল টাওয়ার এবং ফোনের মধ্যে যোগাযোগ রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে হয়।
  • উপগ্রহ যোগাযোগ: উপগ্রহ থেকে টিভি চ্যানেল, জিপিএস, আবহাওয়ার তথ্য, ইন্টারনেট ইত্যাদি পাঠানো ও গ্রহণ করা হয় রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে।
  • Wi-Fi ও Bluetooth: ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ ডিভাইসগুলি নির্দিষ্ট রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে।
  • রাডার (RADAR): বিমান, জাহাজ, গাড়ি বা আবহাওয়ার তথ্য জানতে ব্যবহৃত হয়। রাডার রেডিও তরঙ্গ পাঠিয়ে প্রতিফলিত তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে।
  • রিমোট কন্ট্রোল: গ্যারেজ দরজা, খেলনা ড্রোন ইত্যাদি চালাতে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়।
  • ন্যাভিগেশন ব্যবস্থা: জিপিএস (Global Positioning System) রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে অবস্থান নির্ধারণ করে।
  • সেনাবাহিনী ও বিমান চলাচলে যোগাযোগ: নিরাপদ এবং নিরবিচারে যোগাযোগে রেডিও তরঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • তারা ও মহাকাশ গবেষণা (রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি): রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে মহাকাশ থেকে আগত রেডিও তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে দূরবর্তী গ্রহ-নক্ষত্রের তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

2. মাইক্রোওয়েভ (Microwaves)

মাইক্রোওয়েভ কী?

মাইক্রোওয়েভ হল একটি প্রকারের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ যা রেডিও তরঙ্গের চেয়ে ছোট কিন্তু ইনফ্রারেড রশ্মির চেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্য সম্পন্ন। এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় 1 মিমি থেকে 30 সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং কম্পাংক 300 MHz থেকে 300 GHz পর্যন্ত হয়।

মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ উচ্চ কম্পাংকের কারণে সহজে শক্তি পরিবহণ করতে পারে এবং খাদ্যকে দ্রুত গরম করতে সাহায্য করে। এটি সরাসরি দিক নির্ধারণ করে এবং প্রায় সরলরেখায় চলে, ফলে এটি যোগাযোগ ও রাডারে খুব কার্যকর।

মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য:

  • তরঙ্গদৈর্ঘ্য: 1 মিমি – 30 সেমি
  • কম্পাংক: 300 MHz – 300 GHz
  • গতি: আলো বা অন্যান্য তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের মতোই, 3×108 m/s
  • প্রতিফলন ক্ষমতা: ধাতব বস্তুর উপর প্রতিফলিত হয়
  • উত্তাপ উৎপন্ন করে: বিশেষ করে জলীয় অণুর কম্পনের মাধ্যমে

মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের ব্যবহার:

  • মাইক্রোওয়েভ ওভেন: এটি ঘরের সবচেয়ে পরিচিত ব্যবহার। খাদ্যে উপস্থিত জলীয় অণুগুলিকে কম্পিত করে তাপ উৎপন্ন করে, ফলে খাবার দ্রুত গরম হয়।
  • টেলিযোগাযোগ (Telecommunication): মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের নিরবিচারে সংকেত আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হয়। উপগ্রহ ও টাওয়ারের মধ্যে সংকেত পাঠাতে মাইক্রোওয়েভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • রাডার (RADAR): রাডার প্রযুক্তিতে বস্তু শনাক্ত করতে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহৃত হয়, যেমন- বিমান, জাহাজ, বৃষ্টিপাত বা যানবাহনের গতি পরিমাপ।
  • স্যাটেলাইট যোগাযোগ: উপগ্রহ ও পৃথিবীর মধ্যে টেলিভিশন সম্প্রচার, আবহাওয়ার তথ্য, ইন্টারনেট সার্ভিস ইত্যাদির জন্য মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়।
  • Bluetooth ও Wi-Fi: কিছু নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্লুটুথ ও ওয়াই-ফাই সিস্টেম মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ব্যবহার করে।
  • জিপিএস (GPS): গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমেও মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় সঠিক অবস্থান নির্ধারণের জন্য।
  • মেডিক্যাল থেরাপি ও স্ক্যানিং: কিছু ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে (যেমন মাইক্রোওয়েভ ইমেজিং) এবং চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
  • বৈজ্ঞানিক গবেষণা: মহাকাশ থেকে আগত মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনেক তথ্য আবিষ্কার করেছেন, যেমন কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন, যা বিগ ব্যাং তত্ত্বকে সমর্থন করে।

3. ইনফ্রারেড রশ্মি (Infrared Rays)

ইনফ্রারেড রশ্মি কী?

ইনফ্রারেড রশ্মি বা অবাত আলো (Infrared Rays) হলো এক ধরনের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, যার কম্পাংক দৃশ্যমান আলোর চেয়ে কম এবং মাইক্রোওয়েভের চেয়ে বেশি। মানুষের চোখে এটি দেখা যায় না, তবে এটি তাপ হিসেবে অনুভব করা যায়।

  • তরঙ্গদৈর্ঘ্য: প্রায় 700 ন্যানোমিটার (nm) থেকে 1 মিলিমিটার (mm) পর্যন্ত
  • কম্পাংক: দৃশ্যমান আলোর নিচে এবং মাইক্রোওয়েভের উপরে
  • উৎপত্তি: উত্তপ্ত বস্তু (যেমন: সূর্য, আগুন, শরীর) ইনফ্রারেড রশ্মি নিঃসরণ করে

ইনফ্রারেড রশ্মির বৈশিষ্ট্য:

  • তাপ বহন করে: যেকোনো উত্তপ্ত বস্তু ইনফ্রারেড বিকিরণ করে
  • অদৃশ্য: চোখে দেখা যায় না, তবে সেন্সর বা ক্যামেরা দিয়ে ধরা যায়
  • প্রতিফলন কম: সাধারণত কালো ও গা dark রঙের বস্তুর মাধ্যমে বেশি শোষিত হয়
  • নিরাপদ: মানবদেহে অতিবেগুনি রশ্মির মতো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না

ইনফ্রারেড রশ্মির ব্যবহার:

  • রিমোট কন্ট্রোল: টিভি, এসি, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদির রিমোট কন্ট্রোলে ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহৃত হয়।
  • রাতের দৃষ্টিশক্তি (Night Vision): সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং কিছু ক্যামেরা ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহার করে অন্ধকারে দৃশ্য দেখতে সক্ষম হয়।
  • তাপ চিত্রায়ন (Thermal Imaging): শরীর বা যন্ত্রাংশের তাপমাত্রা পরিমাপ ও শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন: আগুন সনাক্তকরণ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সমস্যা শনাক্তকরণ, কোভিডকালে শরীরের তাপমাত্রা মাপা ইত্যাদি।
  • মেডিক্যাল ব্যবহার: কিছু থেরাপি ও স্ক্যানিং (যেমন ইনফ্রারেড থেরাপি, রক্ত সঞ্চালন নিরীক্ষণ) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
  • ইন্টারনেট যোগাযোগ ও সেন্সর: কিছু ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন ডিভাইস এবং স্বয়ংক্রিয় দরজা বা আলোর সেন্সর ইনফ্রারেড তরঙ্গ ব্যবহার করে।
  • জ্যোতির্বিজ্ঞান: মহাকাশে দূরবর্তী তারা বা গ্রহ থেকে আসা ইনফ্রারেড বিকিরণ বিশ্লেষণ করে মহাকাশ গবেষণা করা হয়।
  • খাদ্যশিল্প ও শুকানো প্রক্রিয়া: ইনফ্রারেড রশ্মি ব্যবহার করে খাদ্য প্যাকেট শুকানো বা সংরক্ষণ করা হয়।
  • জলবায়ু ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ: উপগ্রহের ইনফ্রারেড সেন্সরের মাধ্যমে পৃথিবীর মেঘ, তাপমাত্রা, সমুদ্রের উষ্ণতা ইত্যাদি নিরীক্ষণ করা হয়।

4. দৃশ্যমান আলো (Visible Light)

দৃশ্যমান আলো কী?

দৃশ্যমান আলো বা Visible Light হলো এমন এক ধরনের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, যা মানুষের চোখে দেখা যায়। এটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের একমাত্র অংশ যা আমরা রঙের মাধ্যমে অনুভব করতে পারি।

  • তরঙ্গদৈর্ঘ্য: প্রায় 400 ন্যানোমিটার (nm) থেকে 700 ন্যানোমিটার (nm)
  • রঙের বিন্যাস: বেগুনি → নীল → সবুজ → হলুদ → কমলা → লাল
  • উৎস: সূর্য, আলো যুক্ত বৈদ্যুতিক বাতি, আগুন ইত্যাদি

দৃশ্যমান আলোর বৈশিষ্ট্য:

  • মানুষের চোখ এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য অঞ্চলের আলো দেখতে সক্ষম
  • আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিভিন্ন রঙের অনুভূতি দেয়
  • আলোর বেগ (vacuum-এ) হল প্রায় 3 × 10⁸ মিটার/সেকেন্ড
  • প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার ও বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারে
  • রংধনু দৃশ্যমান আলোর বিচ্ছুরণের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ

দৃশ্যমান আলোর ব্যবহার:

  • মানুষের দৃষ্টিশক্তি: চোখে দৃশ্যমান আলো প্রবেশ করে এবং আমরা আমাদের চারপাশের জিনিস দেখতে পাই।
  • বাতি ও আলোকসজ্জা: ঘরবাড়ি, রাস্তা, অফিস, মঞ্চ ইত্যাদিতে আলোকসজ্জার জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • ক্যামেরা ও ভিডিওগ্রাফি: ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণের জন্য দৃশ্যমান আলো প্রয়োজন। আলো ছাড়া ছবি স্পষ্ট হয় না।
  • মাইক্রোস্কোপ ও টেলিস্কোপ: ছোট বস্তু পর্যবেক্ষণ বা মহাকাশ দেখার জন্য দৃশ্যমান আলো ব্যবহার করা হয়।
  • রঙ সনাক্তকরণ ও রঙ বিশ্লেষণ: শিল্প, বস্ত্র, চিত্রকলা বা ডিজাইন তৈরিতে রঙ সনাক্ত করার জন্য আলো গুরুত্বপূর্ণ।

দৃশ্যমান আলোর সাতটি রঙ:

রংধনুতে দেখা যায় এমন সাতটি মূল রঙ হলো:

  • বেগুনি (Violet)
  • নীল (Indigo)
  • নীল (Blue)
  • সবুজ (Green)
  • হলুদ (Yellow)
  • কমলা (Orange)
  • লাল (Red)

এগুলিকে একত্রে বলা হয় “VIBGYOR” (প্রথম অক্ষর অনুযায়ী)।

5. অতিবেগুনি রশ্মি (Ultraviolet Rays)

  • তরঙ্গদৈর্ঘ্য: 10 nm – 400 nm
  • ব্যবহার: জীবাণু ধ্বংসে, সূর্যালোকে ভিটামিন D উৎপাদনে
  • বিশেষত্ব: অতিরিক্ত UV ত্বকে ক্ষতি করতে পারে

6. এক্স-রে (X-rays)

  • তরঙ্গদৈর্ঘ্য: 0.01 nm – 10 nm
  • ব্যবহার: চিকিৎসায় হাড়ের ছবি তোলায়, নিরাপত্তা স্ক্যানারে
  • বিশেষত্ব: কঠিন বস্তু ভেদ করতে পারে

7. গামা রশ্মি (Gamma Rays)

  • তরঙ্গদৈর্ঘ্য: < 0.01 nm
  • ব্যবহার: ক্যান্সার চিকিৎসায়, পারমাণবিক বিক্রিয়ায়
  • বিশেষত্ব: সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও অনুপ্রবেশক্ষম রশ্মি

List of Tribes of India in Bengali (ভারতের উপজাতিদের তালিকা)

তরঙ্গ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র (Important Wave Formulas)

তরঙ্গ সংক্রান্ত অধ্যয়নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র জানা থাকলে তা পরীক্ষায় ও বাস্তব প্রয়োগে অনেক সাহায্য করে:

তরঙ্গের গতি:

v=f×λ

v = তরঙ্গের গতি

  1. f = কম্পাঙ্ক
  2. λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য
  3. λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য

কম্পাঙ্ক ও সময়:
f=1/T

  1. f = কম্পাঙ্ক
  2. T = প্রতি তরঙ্গের সময়কাল

শব্দের গতির নির্ণয়:

v=t/d

  • d = দূরত্ব
  • t = সময়

এই সূত্রগুলো দিয়ে তুমি তরঙ্গের গতি, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, কিংবা শব্দের গতি সহজে বের করতে পারবে।

Table of Contents


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *