What is Bacteria? ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে?
ব্যাক্টেরিয়ার সংজ্ঞা (Definition of Bacteria):
সর্বত্র বিরাজমান ‘মাইক্রোব’ (microbe) নামে পরিচিত বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত সরলতম এককোশী আণুবীক্ষণিক জীবকে ব্যাক্টেরিয়া বলে।
আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, উদ্ভিদ বৈশিষ্ট্যবহনকারী, সর্বত্র বিরাজমান এককোশী, সরলতম আণুবীক্ষণিক জীবকে ব্যাক্টেরিয়া বলে।
ব্যাকটেরিয়া হল একধরনের অতি ক্ষুদ্র এককোষী জীব, যেগুলি খালি চোখে দেখা যায় না। এরা প্রোক্যারিওটিক জীব, অর্থাৎ এদের কোষে সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখা যায় এবং পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় — মাটি, জল, বায়ু, মানুষের শরীর এমনকি চরম পরিবেশেও।

Characteristics of bacteria (ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য):
- জীব-জগতের অন্তর্গত কোশীয় জীবদের মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম এবং সরলতম জীব।
- ব্যাক্টেরিয়ার কোশ কোশপ্রাচীরযুক্ত।
- ব্যাক্টেরিয়ার নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয়, অর্থাৎ এদের নিউক্লিয়াসে নিউক্লীয় পর্দা, নিউক্লিওলাস ও নিউক্লীয় জালক থাকে না। একটিমাত্র পেঁচানো DNA তত্ত্ব থাকে, যাকে ‘ব্যাকটেরিয়াল ক্রোমোজোম’ বলা হয়। ব্যাকটেরিয়ার এইরকম অনুন্নত নিউক্লিয়াসকে আদি নিউক্লিয়াস বা প্রোক্যারিওটিক নিউক্লিয়াস বলে এবং ব্যাকটেরিয়ার কোশকে প্রোক্যারিওটিক কোশ বলে।
- ব্যাকটেরিয়ার কোশে একক-পর্দাবেষ্টিত কোনো কোশ-অঙ্গাণু থাকে না।
- বেশিরভাগ ব্যাক্টেরিয়া ক্লোরোফিলবিহীন, তাই এদের পুষ্টি পরভোজীয় প্রকৃতির (heterotrophic)।
- কোনো কোনো ব্যাক্টেরিয়া, যেমন- ক্লোরোবিয়াম (Chlorobium), কোম্যাটিয়াম (Chromatiiam) ইত্যাদির দেহে ব্যাকটেরিওক্লোরোফিল (bacteriochlorophyll) থাকায় এরা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য সংশ্লেষে সক্ষম, তাই এরা স্বভোজী।
- ব্যাক্টেরিয়ার দেহেও শ্বসন প্রক্রিয়া চলে। এই শ্বসন সাইটোপ্লাজমীয় পর্দা এবং কোশপ্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে নিঃসৃত এক প্রকার উৎসেচকের সহায়তায় ঘটে। বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া অবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় শ্বাসকার্য চালায়।
- ব্যাকটেরিয়ার কোশে মাইটোসিস বিভাজন ঘটে না। এরা প্রধানত অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে অঙ্গজ-জনন প্রক্রিয়ায় বংশ বিস্তার করে।
- বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহে পরজীবী হিসেবে বসবাস করে এবং বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। তবে কিছু ব্যাকটেরিয়া মিথোজীবী হিসেবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপকারও করে। যেমন, শিল্পী গোত্রের উদ্ভিদের শিকড়ের গাঁটে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া রাইজোবিয়াম (Rhizobium), যা উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। আবার মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী এসেরিকিয়া কোলাই (Escherichia coli) ব্যাকটেরিয়া ভিটামিন B₁ (B₁₂ নয়) উৎপাদনে সাহায্য করে। এছাড়া, কিছু ব্যাকটেরিয়া যেমন অ্যাজোটোব্যাকটার (Azotobacter) ও ক্লস্ট্রিডিয়াম (Clostridium) মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
Why Bacteria are called Plants? (ব্যাকটেরিয়াকে উদ্ভিদ বলা হয় কেন?)
নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য ব্যাক্টেরিয়াকে উদ্ভিদ রূপে গণ্য করা হয়-
- ব্যাকটেরিয়ার কোশপ্রাচীর উদ্ভিদের মতো লিপিড, প্রোটিন ও পলিস্যাকারাইড সমন্বিত
- এদের জনন, উদ্ভিদের মতো অলাজ-জনন পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়,
- এরা উদ্ভিদের মতো ভিটামিন সংশ্লেষে সক্ষম,
- কয়েকপ্রকার ব্যাক্টেরিয়ার দেহে ক্লোরোফিলের উপস্থিতি,
- কোশপ্রাচীরে নীলাভ-সবুজ শৈবালের ন্যায় পেপটাইডো গ্লাইক্যানের উপস্থিতি।
What is Virus? ভাইরাস কী? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য, ভাইরাসের প্রকৃতি, ভাইরাসকে অকোষীয় বলা হয় কেন?
আদর্শ ব্যাক্টেরিয়া কোশের গঠন (Structure of a Typical Bacterial cell):
ব্যাক্টেরিয়া এককোশী। এদের গঠন খুবই সরল প্রকৃতির। ব্যাকটেরিয়া কোশে সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকায় এরা প্রোক্যারিওটিক (prokaryotic) কোশভুক্ত। একটি আদর্শ ব্যাক্টেরিয়া কোশের কোশদেহ একটি জটিল আবরণী পর্দা ও পর্দাবেষ্টিত প্রোটোপ্লাস্ট নিয়ে গঠিত। এছাড়াও রয়েছে কোশপ্রাচীর, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়েড (নিউক্লীয় বস্তু)।
1. ক্যাপসুল (Capsule): কিছু ব্যাকটেরিয়ার কোষের বাইরের দিকে এক ধরনের জেলির মতো আবরন থাকে, যাকে ক্যাপসুল বলে। এটি ব্যাকটেরিয়াকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে এবং রোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারে।
2. কোষপ্রাচীর (Cell Wall): এটি কোষের একটি শক্ত স্তর যা ব্যাকটেরিয়ার আকার বজায় রাখে এবং কোষকে সুরক্ষা দেয়। এটি প্রধানত পেপটিডোগ্লাইকান নামক এক ধরনের যৌগ দিয়ে তৈরি।
3. কোষঝিল্লি (Cell Membrane বা Plasma Membrane): কোষপ্রাচীরের নিচে থাকে। এটি আধা-পারগম্য (semi-permeable), যার মাধ্যমে পদার্থ কোষের ভিতরে ও বাইরে যেতে পারে।
4. নিউক্লিওয়েড (Nucleoid): এখানে ব্যাকটেরিয়ার জিনগত উপাদান (DNA) থাকে। এটি সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস নয়, তবে এটি কোষের নিয়ন্ত্রণ ও বংশবৃদ্ধির কাজ করে।
7. সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm): কোষের অভ্যন্তরে থাকা জেলির মতো তরল পদার্থ, যেখানে কোষের অন্যান্য গঠন ও জৈবিক ক্রিয়া সংঘটিত হয়।
6. রাইবোজোম (Ribosome): এগুলি প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজ করে। ব্যাকটেরিয়াতে ছোট আকারের ৭০এস টাইপের রাইবোজোম থাকে।
7. ফ্ল্যাজেলা (Flagella): কিছু ব্যাকটেরিয়ার চলাচলের জন্য চুলের মতো লম্বা গঠন থাকে, যাকে ফ্ল্যাজেলা বলে। এগুলি কোষকে গমনাগমন করতে সাহায্য করে।
8. পাইলি বা ফিমব্রিয়া (Pili or Fimbriae): এগুলি ছোট, চুলের মতো গঠন যা কোষকে অন্যান্য কোষ বা পৃষ্ঠের সঙ্গে আটকাতে সাহায্য করে।
0 Comments